উত্তর:
ওশিয়ানিয়া: পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাদেশ
আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মহাদেশ হলো ওশিয়ানিয়া। এটি প্রায় দশ হাজারেরও বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি, যা পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও অনেক কম।
ভৌগোলিক অবস্থান
ওশিয়ানিয়া মহাদেশটি উত্তরে ১৫° উত্তর অক্ষাংশ থেকে দক্ষিণে ৪৭° দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং পশ্চিমে ১১৪° পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে ১৩৪° পশ্চিম দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য
ওশিয়ানিয়া তার অনন্য প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য বিখ্যাত। ক্যাঙারু, ওয়ালবি, প্লাটিপাস, কোয়ালা, এমু, এবং কিউই পাখির মতো প্রাণী এখানে দেখা যায়। এই প্রাণীগুলি পৃথিবীর অন্য কোনো মহাদেশে নেই। ইউক্যালিপটাস গাছের উৎপত্তিও এখানেই। এছাড়া জারা ও কারি গাছসহ বিভিন্ন চিরহরিৎ উদ্ভিদ এখানে পাওয়া যায়।
জনসংখ্যা ও ভাষা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, ওশিয়ানিয়ার জনসংখ্যা ৩,৫১,৬২,৬৭০ জন। এখানে ২৮টি ভাষা প্রচলিত। প্রধান শহরগুলির মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা, সিডনি, মেলবোর্ন, পারথ, অ্যাডিলেড এবং নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন ও অকল্যান্ড।
পর্যটন ও অর্থনীতি
ওশিয়ানিয়ার অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। এর বেশিরভাগ অঞ্চল দক্ষিণ গোলার্ধে হওয়ায় জুন-জুলাই মাসে শীত এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে গ্রীষ্মকাল হয়।
ইউরোপীয় অভিযানের প্রভাব
ইউরোপীয় অভিযানের আগে ওশিয়ানিয়ার দ্বীপগুলিতে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করত। অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাবরিজিন্যাল এবং নিউজিল্যান্ডে মাওরি সম্প্রদায় ছিল উল্লেখযোগ্য।
ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা এই অঞ্চলে আসে। ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান তাঁর বিখ্যাত পৃথিবী পরিভ্রমণের সময় ওশিয়ানিয়ার কিছু দ্বীপ আবিষ্কার করেন। ডাচ নাবিক এবেল তাসমান ১৬৪৪ সালে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, টোঙ্গা ও ফিজি দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছান। ১৭৭০ সালে জেমস কুক অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল এবং প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে পদার্পণ করেন।
১৭৮৯ সালে ব্রিটিশ রয়্যাল নৌবাহিনীর বিদ্রোহীরা পিটকেয়ার্ন দ্বীপে স্থায়ী বসতি স্থাপন করে। এরপর অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং ফিজিতে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপিত হয়। ফরাসি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিরাও কিছু দ্বীপে আধিপত্য বিস্তার করে।
উপনিবেশ স্থাপনের প্রভাব
উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় সোনার খনি আবিষ্কার এবং অন্যান্য সম্পদ আকৃষ্ট করে ইউরোপীয়দের। এর ফলে এখানকার আদিবাসী সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। ব্রিটিশ উপনিবেশের কারণে স্থানীয় আদিবাসীরা অনেক সময় নিজেদের ভূমি ও সংস্কৃতি হারিয়েছে।
উপসংহার
ওশিয়ানিয়া শুধু তার ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য নয়, তার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং আধুনিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাদেশটি পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য এবং এর ভূমি ও সংস্কৃতি বিশ্বের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।