পম্পাস অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রকৃতি, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, কৃষিকাজ, পশুপালন এবং শিল্পক্ষেত্রে এর অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।

উত্তর:

পম্পাস অঞ্চল:
পম্পাস একটি স্পেনীয় শব্দ, যার অর্থ বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি। এটি দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তৃণভূমি অঞ্চল, যা মূলত আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত। এর আকৃতি অনেকটা গাবখানা চাঁদের মতো।

ভৌগোলিক অবস্থান:

পম্পাস অঞ্চলটি ৩০° দক্ষিণ থেকে ৩৮° দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ৫৪° পশ্চিম থেকে ৬৫° পশ্চিম দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর উত্তর দিকে প্রানচাকো সমভূমি ও ব্রাজিল উচ্চভূমি, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণে প্যাটাগোনিয়া মরুভূমি, এবং পশ্চিমে আন্দিজ পর্বতের পাদদেশ অঞ্চল রয়েছে।

প্রকৃতি ও নদী:

পম্পাস অঞ্চলের ভূমি প্রধানত নদীবাহিত পলি ও বায়ুবাহিত লোয়েস মৃত্তিকা দিয়ে গঠিত। অঞ্চলটি আন্দিজ পর্বতের পাদদেশ থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে ঢালু। এখানে কিছু ছোটো পাহাড় বা টিলা দেখা যায়। প্রধান নদীগুলি হলো পারানা ও প্যারাগুয়ে, যা একত্রে লা প্লাটা নদী গঠন করে এবং আটলান্টিক মহাসাগরে পড়ে।

জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় পম্পাস অঞ্চলের জলবায়ু আরামদায়ক। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা ২০°-২৪° সেলসিয়াস এবং শীতকালে ৮°-১০° সেলসিয়াস থাকে। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গড়ে ৫০ সেমি থেকে ১০০ সেমি পর্যন্ত। পশ্চিমের তুলনায় পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। কম বৃষ্টিপাতের কারণে এখানে তৃণভূমি গড়ে উঠেছে। পূর্বদিকে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় তৃণভূমির মাঝে পপলার ও ইউক্যালিপটাস গাছ দেখা যায়।

কৃষিকাজ:

পম্পাস অঞ্চল দক্ষিণ আমেরিকার শস্যভাণ্ডার নামে পরিচিত। উর্বর পলি মৃত্তিকা, পরিমিত বৃষ্টিপাত এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারে এখানে কৃষিকাজ অত্যন্ত উন্নত। প্রধান ফসল হলো গম, যা আর্জেন্টিনাকে পৃথিবীর অন্যতম গম রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করেছে। এছাড়া ভুট্টা, বার্লি, আখ, তুলা, ফলমূল এবং শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়।

পশুপালন:

পম্পাস অঞ্চলের পশুপালন অত্যন্ত উন্নত। এখানে মাংস, দুধ এবং পশমের জন্য গবাদিপশু ও ভেড়া পালন করা হয়। পূর্বদিকে বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে গরু পালন এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ভেড়া পালন করা হয়। করডোবা অঞ্চল দুগ্ধ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে গো-মাংস, মাখন, পনির, পশম এবং চামড়া বিদেশে রপ্তানি করা হয়। মাংস রপ্তানিতে পম্পাস অঞ্চল বিশ্বের শীর্ষস্থান দখল করে।

খনিজ সম্পদ ও শিল্প:

পম্পাস অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ নয়, তবে এখানে কৃষি ও পশুপালনভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠেছে। দুগ্ধজাত পণ্য যেমন পনির, মাখন এবং চিজ, এবং মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া কৃষিজাত কাঁচামাল থেকে ময়দা, চিনি, এবং বেকারি পণ্য উৎপাদিত হয়।

উপসংহার:

পম্পাস অঞ্চল আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু দক্ষিণ আমেরিকার শস্যভাণ্ডার নয়, গো-মাংস রপ্তানি ও পশুপালনেও বিশ্বখ্যাত। অঞ্চলটির ভূপ্রকৃতি, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং কৃষি ও শিল্পের সমন্বয় একে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত করেছে। 

এছাড়া দেখে নাওঃ 

ওশিয়ানিয়া মহাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, জনসংখ্যা, অর্থনীতি এবং ইউরোপীয় অভিযানের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *